কেন নেপালের এ সংকট দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

0
21
নেপালের পার্লামেন্টে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতাছবি: এএফপি

কেন নেপালের এ সংকট দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

নেপালের প্রধানমন্ত্রী (পদত্যাগ করা) কে পি শর্মা অলি গত রোববার রাজধানী কাঠমান্ডুতে পরবর্তী দিন এক বড় বিক্ষোভ আয়োজন করায় তরুণদের উপহাস করেছিলেন। দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে যাচ্ছিলেন তাঁরা।

অলি বলেছিলেন, বিক্ষোভকারীরা নিজেদের ‘জেন-জি’ (জেনারেশন জেড) বলে মনে করেন এবং তাঁরা যা চান, তা-ই দাবি করতে পারেন।

৪৮ ঘণ্টার কম সময়ে, অলি সাবেক প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেছেন। যে ‘জেন-জি’ আন্দোলনকে তিনি অবহেলার সঙ্গে দেখেছিলেন, তাঁরাই এখন নেপালের নতুন নেতৃত্ব নিয়ে কথা বলছেন।

অলির ওই বক্তব্যের পরদিন গত সোমবার পুলিশের গুলিতে কমপক্ষে ১৯ জন নিহত হওয়ায় পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এর জেরে মঙ্গলবার বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা সংসদ ভবন এবং কয়েকজন রাজনীতিবিদের বাড়িতে আগুন দেন। মন্ত্রিসভার সদস্যরা পদত্যাগ করেন এবং প্রধানমন্ত্রীও চাপের মুখে পড়েন। শেষ পর্যন্ত তিনিও পদত্যাগ করেন। সোমবার ও মঙ্গলবারের সহিংসতায় মোট ৩১ জন নিহত হয়েছেন।

নাটকীয় এ ঘটনাপ্রবাহ নেপালকে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সাম্প্রতিকতম কেন্দ্র বানিয়েছে। এর আগে তরুণদের নেতৃত্বাধীন গণ-আন্দোলনে ২০২২ সালে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রীলঙ্কা ও ২০২৪ সালে একই অঞ্চলের বাংলাদেশে সরকারের পতন ঘটে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতা শুধু তিন কোটি জনসংখ্যার দেশটিকেই নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়া ও বিশ্বকে প্রভাবিত করবে। কারণ, নেপালের রাজনৈতিক ইতিহাস খুবই পরিবর্তনশীল ও উত্তাল এবং দেশটি ভারত, চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে রাখার চেষ্টা করে থাকে।

নেপালে কী ঘটছে

৮ সেপ্টেম্বর হাজার হাজার তরুণ সরকারের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে রাস্তায় নামেন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোর ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা তাঁদের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দেয়।

কিছু বিক্ষোভকারী ব্যারিকেড ভেঙে সংসদ কমপ্লেক্সে ঢুকে পড়েন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনী গুলি, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও জলকামান ব্যবহার করে। এতে নিহত হন অন্তত ১৯ জন। এ ঘটনা দেশজুড়ে তরুণদের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দেয়।

মঙ্গলবার আরও বড় ও ভয়ানক বিক্ষোভ শুরু হয়। রাজনীতিবিদদের বাড়ি ও রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে ভাঙচুর করে আগুন লাগান বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা। নেপালের সবচেয়ে বড় সংবাদমাধ্যম কান্তিপুর পাবলিকেশন্সের ভবনেও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

 

গত সোমবার বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা ব্যারিকেড ভেঙে সংসদ কমপ্লেক্সে ঢুকে পড়েন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনী গুলি, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও জলকামান ব্যবহার করে। এতে নিহত হন অন্তত ১৯ জন। এ ঘটনা তরুণদের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দেয়। মঙ্গলবার আরও বড় ও ভয়ানক বিক্ষোভ শুরু হয়। রাজনীতিবিদদের বাড়ি ও রাজনৈতিক দলের অফিসে আগুন লাগান বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা।

এদিন দুপুরের দিকে অলি পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তবে ‘জেন-জি আন্দোলন’ হিসেবে নিজেদের অভিহিত করা বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা এখন সংসদ ভেঙে দেওয়া, নতুন নির্বাচন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও ৮ সেপ্টেম্বরের গুলির নির্দেশদাতাদের বিচার দাবি করছেন।

এমন পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা ফেরাতে সেনারা রাস্তায় নেমেছেন এবং কাঠমান্ডুতে কারফিউ জারি করা হয়েছে।

নেপালে এ ধরনের বড় ছাত্র আন্দোলন নতুন নয়। দেশটির আধুনিক ইতিহাস ছাত্র আন্দোলন, রাজপ্রাসাদের হস্তক্ষেপ ও সহিংসতায় ভরা। এর মধ্যে রয়েছে এক দশকের গৃহযুদ্ধও।

 

কাঠমান্ডুর রাষ্ট্রপতির কার্যালয়েও আগুন দেন বিক্ষোভকারীরাএএফপি

রানা শাসন থেকে পঞ্চায়েত যুগ

কিছু শিক্ষিত নেপালি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অবিভক্ত ভারতের স্বাধীনতার সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ এ পাক-ভারত উপমহাদেশের স্বাধীনতায় তাঁরা নেপালে রানাদের সরাসরি শাসন অবসানের বৃহত্তর আন্দোলনে অংশ নিতে অনুপ্রাণিত হন।

১৯৫১ সালে রানাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন নেপালের প্রথম আধুনিক বিপ্লবে রূপ নেয়। রানাদের একটি চুক্তির মাধ্যমে পরোক্ষ শাসন মেনে নিতে হয়। পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া রাজা ত্রিভুবন দেশে ফেরেন। রানা ও তৎকালীন প্রধান রাজনৈতিক দল নেপালি কংগ্রেস (এনসি) মিলে একটি সরকার গঠন করে।

১৯৫৯ সালে প্রথম সাধারণ নির্বাচন হয়। এনসির বিশ্বেশ্বর প্রসাদ কৈরালা প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু এক বছর পরই রাজা মাহেন্দ্র বীরবিক্রম কৈরালা সরকারের পতন ঘটান ও প্রায় তিন দশক ধরে রাজনৈতিক দলবিহীন পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু করেন।

রাজনৈতিক কার্যক্রম সীমিত হওয়ায় ছাত্র আন্দোলন একমাত্র প্রতিবাদের পথ হয়ে ওঠে। ১৯৭০ ও ৮০-এর দশকে শিক্ষা ও রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্দোলন হয়।

ধীরে ধীরে আন্দোলন পঞ্চায়েত ব্যবস্থার পতন ঘটায় ১৯৯০ সালে এবং সংসদীয় রাজনীতির দরজা আবার খুলে যায়।

 

সশস্ত্র বিদ্রোহ ও প্রজাতন্ত্রের উদ্ভব

১৯৯৬-২০০৬, নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী) রাজতন্ত্র উৎখাতের জন্য লড়াই চালায়। এতে ১০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হন।

২০০৬ সালে রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও ছাত্রদের আন্দোলন রাজা জ্ঞানেন্দ্রকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করে। এতে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং ২০০৮ সালে নেপালকে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয়।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, অলি সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা বিক্ষোভ ফুঁসে ওঠার কারণ হলেও জেন-জি আন্দোলন বহু বছর ধরে জমে থাকা অসন্তোষের প্রতিফলন।

 

এর পর থেকে নেপালের তিনটি প্রধান দল—কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (সম্মিলিত মার্ক্সবাদী ও লেনিনবাদী) তথা সিপিএন-ইউএমএল, কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (মাওবাদী) তথা সিপিএন-এমসি এবং নেপালি কংগ্রেসের (এনসি) আট নেতা দেশকে ১৪ বার নেতৃত্ব দেন। অলি চতুর্থবারের জন্য প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, অলি সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা বিক্ষোভ ফুঁসে ওঠার কারণ হলেও, জেন-জি আন্দোলন বহু বছর ধরে জমে থাকা অসন্তোষের প্রতিফলন।

কাঠমান্ডুর অনুসন্ধানী সাংবাদিক রজনীশ ভান্ডারি বলেন, এ আন্দোলন শাসকদের দুর্নীতি, খামখেয়ালি ও অপশাসনের বিরুদ্ধে তরুণদের ক্ষোভকেই তুলে ধরেছে।

‘এ আন্দোলন দেখায়, নেপালের তরুণেরা শাসকদের প্রতি ক্ষোভ পুষে রেখেছিলেন। কারণ, তাঁরা তরুণদের দাবির প্রতি কর্ণপাত করেননি, তাঁদের সঙ্গে কথা বলেননি এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ চালিয়ে গেছেন’, রজনীশ বলেন আল-জাজিরাকে।

কাঠমান্ডুর নাগরিক ও ডিজিটাল অধিকারকর্মী আশীর্বাদ ত্রিপাঠী বলেন, ‘এ বিক্ষোভ এক রাতের ঘটনা নয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের ক্ষমতার অপব্যবহার আর দুর্নীতির কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি। তিন প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রবীণ নেতাদের প্রতি দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ জমে ছিল তরুণদের। নেতারা শুধু প্রধানমন্ত্রীর পদে পালাবদল ঘটিয়েছেন, ঠিক যেন মিউজিক্যাল চেয়ারের খেলা।’

নেপাল সরকারের প্রধান প্রশাসনিক ভবন কাঠমান্ডুর সিংহ দরবারের বাইরে গাড়িতে আগুনছবি: এএফপি

প্রতিবেশী দেশ ও ক্ষমতার রাজনীতি

নেপালে যা ঘটছে, তা শুধু দেশেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি দক্ষিণ এশিয়া ও বিশ্বের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

নেপাল পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ৮৮৫ কিলোমিটার ও উত্তর-দক্ষিণে ১৯৩ কিলোমিটার বিস্তৃত। দেশটি দুই আঞ্চলিক শক্তির মধ্যে অবস্থিত-উত্তরে চীন; দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিমে ভারত।

এ আন্দোলন শাসকদের দুর্নীতি, খামখেয়ালি ও অপশাসনের বিরুদ্ধে তরুণদের ক্ষোভকেই তুলে ধরেছে।

-রজনীশ ভান্ডারি, কাঠমান্ডুর অনুসন্ধানী সাংবাদিক

ঐতিহাসিকভাবে প্রতিবেশী ভারতের ঘনিষ্ঠ হলেও দেশটির সঙ্গে নেপালের রাজনৈতিক সম্পর্ক দেশি রাজনীতির সঙ্গে বদলে যায়। অলি বেশির ভাগ সময় চীনের দিকে ঝুঁকেছিলেন। তাঁর পদত্যাগ কাঠমান্ডুতে রাজনৈতিক ভারসাম্যের নতুন দুয়ার খুলেছে।

সমাজবিজ্ঞানী লোকরঞ্জন পরাজৌলি বলেন, পরবর্তী শাসক কে হচ্ছেন, তা স্পষ্ট নয়। তবে সম্ভবত তিনি ‘স্বাধীন’ ব্যক্তি হবেন, যিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন ও সেনাবাহিনীর আস্থাভাজন।

কিছু বিশ্লেষক সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকিকে সম্ভাব্য অন্তর্বর্তী প্রধান হিসেবে দেখছেন। অন্যরা কাঠমান্ডুর মেয়র ও ৩৫ বছর বয়সী র‍্যাপ সংগীতশিল্পী বালেন্দ্র শাহকেও (বালেন শাহ নামে বেশি পরিচিত) বিকল্প মনে করছেন।

যা–ই হোক, নাম প্রকাশ না করার শর্তে কাঠমান্ডুর একজন মানবাধিকারকর্মী বলেন, নতুন নেতা যে-ই হোন না কেন, ভারত ও চীন দেশটিতে স্থিতিশীলতা এবং নিজেদের স্বার্থরক্ষায় কাজ করবে, এমন সরকার চাইবে।

ত্রিপাঠী বলেন, তবে নেপাল সব সময় দুই প্রতিবেশী দেশ-ভারত ও চীনের সঙ্গে সমতার সম্পর্ক বজায় রেখেছে।

আঞ্চলিক হিসাব–নিকাশ

যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিশেষজ্ঞ আলী হাসান বলেন, অলির পতন বেইজিংয়ের জন্য ধাক্কা ও নয়াদিল্লির জন্য সুযোগ হতে পারে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপির কিছু অংশ নেপালের রাজতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা মনে করে, রাজা জ্ঞানেন্দ্রকে ফেরানো উচিত। তবে ‘জেন-জি আন্দোলন’ তাদের (রাজতন্ত্রপন্থীদের) পক্ষে নয়।

পাকিস্তানও সম্প্রতি রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখেছে, বিশেষ করে ২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে সংসদে আস্থা ভোটের মাধ্যমে সরানোর পর। বিশ্লেষকেরা বলছেন, নেপালের বর্তমান সংকট পাকিস্তানের শাসক মহলকেও উদ্বিগ্ন করতে পারে।

এ বছরের শুরুতে নেপালের সাবেক রাজা জ্ঞানেন্দ্র কাঠমান্ডুতে ব্যাপক গণসংবর্ধনা পান। এতে বোঝা যায়, নেপালি সমাজের একটি অংশ এখনো সাবেক শাসকদের সমর্থন করে। হাসান বলেন, যদি বর্তমান রাজনৈতিক সংকট থেকে রাজতন্ত্রপন্থী আন্দোলন লাভবান হয়, তবে ভারতের বিজেপিও এর সুফল পেতে পারে।

তবে আলী হাসান আরও বলেন, অলিকে সরিয়ে দেওয়া ‘জেন-জি’ বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা জ্ঞানেন্দ্রর প্রত্যাবর্তনের পক্ষে নন।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাকিস্তানও নেপালের রাজনৈতিক পরিস্থিতি মনোযোগ দিয়ে দেখছে। পাকিস্তানের সঙ্গে নেপালের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ হলেও তা কৌশলগত গুরুত্বের মধ্যেই সীমিত।

তবু নেপালের শাসকেরা মাঝেমধ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ব্যবহার করেছেন ভারতকে মনে করিয়ে দিতে যে তাঁদেরও আঞ্চলিক বিকল্প আছে। ১৯৬০ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সরকার কৈরালা সরকারকে বরখাস্ত করায় নেপালের রাজা মাহেন্দ্রের সমালোচনা করেছিল। এক বছর পর নেপালের রাজা পাকিস্তান সফর করেন। এরপর ১৯৬৩ সালে তিনি পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানকে উষ্ণ আতিথ্য প্রদান করেন।

অতিসম্প্রতি, চলতি বছরের মে মাসে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার সময় যখন বন্দুকধারীরা ভারতশাসিত কাশ্মীরে ২৬ জনকে হত্যা করে, নেপাল পাকিস্তানের ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটির একটি প্রতিনিধিদলকে অভ্যর্থনা জানায়। এতে নয়াদিল্লির ভ্রু কুঁচকে যায়। ভারতের দৃষ্টিতে অলি সব সময় চীনের (যা পাকিস্তানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র) সঙ্গে অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

পাকিস্তানও সম্প্রতি রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখেছে, বিশেষ করে ২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে সংসদে আস্থা ভোটের মাধ্যমে সরানোর পর। বিশ্লেষকেরা বলছেন, নেপালের বর্তমান সংকট পাকিস্তানের শাসক মহলকেও উদ্বিগ্ন করতে পারে।

আলী হাসান বলেন, ‘পাকিস্তানের অভিজাতরা হয়তো ভাবছেন, তাঁদের ক্ষমতা কতটা নিরাপদ। কারণ, তাঁদের ওপর প্রায়ই এমন অভিযোগ আসে, যা বাংলাদেশি, শ্রীলঙ্কান ও নেপালি বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা তাঁদের শাসকদের বিরুদ্ধে জানিয়েছেন, যেমন সরকার শুধু নিজেদের স্বার্থ দেখে, সাধারণ মানুষের কথা উপেক্ষা করে ও অত্যন্ত স্বৈরাচারী।’

তবে নাম না প্রকাশ করার শর্তে অনিচ্ছুক কাঠমান্ডুর একজন মানবাধিকারকর্মী বলেন, নেপালের দৃষ্টিকোণ থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন নেতার প্রধান অগ্রাধিকার হবে না, তিনি যে-ই হোন। তিনি আরও বলেন, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে নেপালের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, কিন্তু ভারত বা চীনের মতো তা নেপালের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বড় কোনো প্রভাব ফেলে না। এ ছাড়া নেপালের সরকারগুলোর পাকিস্তানের ব্যাপারে কোনো বিশেষ নীতি নেই।’

সূএ : প্রথম আলো

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here