ভারতে এবারের লোকসভা নির্বাচন হয়েছে সাত দফায় ভোটগ্রহণের মাধ্যমে। ৭ম তথা শেষ দফার ভোটের প্রচার শেষ করেই সোজা তামিলনাড়ুর উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
সেখানে কন্যাকুমারীর বিবেকানন্দ শিলা ‘ধ্যানমণ্ডপম’-এ যোগমগ্ন হন তিনি। মোদি ধ্যান করেন টানা ৪৫ ঘণ্টা ধরে। তবে তার সেই ধ্যানও তামিলনাড়ুতে রক্ষা করতে পারল না বিজেপিকে।
ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় এই রাজ্যেটিতে বিজেপির ফলাফল শূন্যই। এনডিএ জোট মাত্র একটি আসন পেয়েছে। অর্থাৎ ভোটের ফলাফল থেকে স্পষ্ট,ভোটপ্রচারের সময় তামিল আবেগ উস্কে দিয়েও লাভ হয়নি মোদি-অমিত শাহ দের।
কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, তামিলনাড়ুতে এবারও একপেশে লড়াই হয়েছে। রাজ্যের শাসকদল ডিএমকে দাপট দেখিয়েছে ফলাফলে। তাদের ঝুলিতে গেছে ২২টি আসন। কংগ্রেস পেয়েছে ৯টি আসন। ২০১৯ সালের মতো দু’টি করে আসন পেয়েছে সিপিএম এবং সিপিআই।
বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র অন্য দুই শরিক দল একটি করে আসন পেয়েছে এ বারের ভোটে। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল এডিএমকে শূন্যে নেমে গেছে।
হিন্দিবলয়ে দাপট থাকলেও বিগত লোকসভা নির্বাচনগুলোতে দক্ষিণ ভারতে তেমন ‘প্রভাব’ ফেলতে পারেনি বিজেপি। তাই এ বারের নির্বাচনে দক্ষিণ ভারতে আসনসংখ্যা বৃদ্ধি করতে কোনও খামতি রাখতে চায়নি কট্টর হিন্দুত্ববাদী এই দলটি।
বিশেষত,তামিলনাড়ুর মতো রাজ্য নিয়ে আলাদা হিসাব-নিকাশ করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহরা। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যটিতে দাঁত ফোঁটাতে পারেনি বিজেপি। কিন্তু এ বার সেই অংক পাল্টাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মোদি-শাহ। কিন্তু এই জুটির জাদু এবারও কাজ করল না।
নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার পর থেকেই বার বার তামিলনাড়ুতে গেছেন মোদি। রোড-শো থেকে জনসভা, বাদ পড়েনি কিছুই। তামিলনাড়ুর বিজেপি নেতৃত্বও আদা-জল খেয়ে নেমেছিলেন নির্বাচনের প্রচারে। এর সঙ্গে মোদি প্রতিটি সভা থেকেই চেষ্টা করে গেছেন তামিল আবেগ উস্কে দিতে। তা করতে গিয়ে তিনি টেনে এনেছেন কচ্চতীবু দ্বীপকে।
কচ্চতীবু দ্বীপের অধিকার নিয়ে তামিলনাড়ুতে আন্দোলন চলছে বহু দিন ধরে। তামিলনাড়ুর অনেকের দাবি ছিল, ১৯৭৪ সালের চুক্তি প্রত্যাহার করে কচ্চতীবু দ্বীপ আবার ভারতকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক। কিন্তু দু’দেশের কোনও সরকারই সে দাবি নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামায়নি। এ বারের ভোটপ্রচারে সেই আবেগকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছিল বিজেপি।
সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে মোদি বলেন,‘ভগবান রামের নাম রয়েছে, এমন গ্রামের সংখ্যা তো সবচেয়ে বেশি তামিলনাড়ুতেই।’ যে সূত্রে রাজনীতিবিদদের একাংশ মনে করেছিলেন, তামিলনাড়ুর আঞ্চলিক আবেগ উস্কে দেওয়ার পাশাপাশি ‘হিন্দুত্ববাদী’ তাসও খেলেছেন মোদি।
২০১৯ সালের নির্বাচনে ৩৯ আসনের তামিলনাড়ুতে মাত্র একটি আসন পেয়েছিল এনডিএ। সেটিও আবার গিয়েছিল সাবেক মুখ্যমন্ত্রী তথা এডিএমকে প্রধান পলানীস্বামীর দলের ঝুলিতে। তবে ২০১৪ সালে এমন অবস্থা ছিল না এডিএমকে দলের। সে বার কোনও জোটে না গিয়ে একাই লড়েছিল জয়ললিতার দল। তামিলনাড়ুর ৩৯টির মধ্যে ৩৭টি আসন জিতেছিল তারা।
কিন্তু জয়ললিতার মৃত্যুর পর ধস নামে দলে। তার উত্তরাধিকারী হওয়ার লড়াই নিয়ে গৃহযুদ্ধ বাঁধে। প্রথমে জয়ললিতার অনুগামী পনিরসেলভম মুখ্যমন্ত্রী হন। কিন্তু ভাঙন রুখতে পারেননি। একটা সময়ে তিনিই দল ছেড়ে বেরিয়ে যান।
তামিলনাড়ুর শাসকদল ডিএমকে ২০১৪ সালে এনডিএ জোটে ছিল। কিন্তু একটিও আসন তারা জিততে পারেনি। সে বার বিজেপি পেয়েছিল একটি আসন। শূন্য ছিল কংগ্রেসও।
তবে ২০১৯ সালে জোটের হিসাব পাল্টে যায়। ভোটে ডিএমকে নেতৃত্বাধীন ৯টি দলের জোটের অন্যতম শরিক ছিল কংগ্রেস। ৩৯টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৩৮টিতেই জিতেছিল ওই জোট।
সূত্রঃ ঢাকা পোষ্ট